পাহাড়িদের বিয়ে হলেও এতদিন ছিলো না কোন রেজিস্ট্রেশন। প্রথাগত নিয়ম অনুসরণ করে বিয়ে হওয়ার ফলে থাকতো না তেমন কোন নথি। যার ফলে বিভিন্ন সময় সমস্যার মুখোমুখি হতেন নারীরা। এবার সে সমস্যা দূর হচ্ছে বিবাহের রেজিস্ট্রেশন শুরুর মধ্য দিয়ে। সম্প্রতি প্রথমবারের মতো বান্দরবানের থানচি উপজেলায় পাহাড়ি সম্প্রদায়ের বিবাহ রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যা পাহাড়িদের জন্য এক নতুন যুগের সূচনা।
জানা গেছে, গত ২ মার্চ উপজেলা পরিষদের হলরুমে এক অনুষ্ঠানে হেডম্যান কারবারী কল্যাণ পরিষদ এবং বিভিন্ন স্থানীয় নেতারা রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সদস্য, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), সাংবাদিক, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তারা এবং গন্যমান্য ব্যক্তিরা।
থানচি উপজেলার ১১টি মৌজা ও ২৪২টি গ্রামের হেডম্যান এবং কারবারিরা রেজিস্ট্রেশনের রেজিস্টার বই হাতে পাওয়ার পর, তাদের উচ্ছ্বাস ছিল দৃশ্যমান। এখন থেকে তারা তাদের এলাকার বিবাহগুলো আইনগতভাবে নিবন্ধন করতে পারবেন। যা স্থানীয় জনগণের সামাজিক মর্যাদা এবং অধিকার রক্ষায় সাহায্য করবে।
হেডম্যান মুইশৈথুই মারমা বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। যা আমাদের সমাজের ঐতিহ্য এবং রীতিনীতি সংরক্ষণে সাহায্য করবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে, আমাদের জনগণের বিবাহগুলো সরকারিভাবে স্বীকৃত হবে। আমরা আরও আইনি সুরক্ষা পাবো।
বোমাং সার্কেল হেডম্যান-কারবারি কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উনিংহ্লা মারমা বলেন, এখন আমাদের প্রথাগুলো সংরক্ষিত থাকবে এবং আমাদের পরিবারগুলোর সামাজিক মর্যাদা বেড়ে যাবে। এটা আমাদের জন্য এক বড় অর্জন।
ইউএনও মোহাম্মদ আবদুল্লাহ-আল-ফয়সাল বলেন, আমরা পাহাড়ি জনগণের জন্য উন্নয়নমূলক কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। এই রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুধুমাত্র একটি আইনি দিক নয়, এটি তাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার নিশ্চিত করার একটি বড় পদক্ষেপ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই বিবাহ রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু হওয়া শুধুমাত্র একটি প্রশাসনিক পরিবর্তন নয়, এটি একটি সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক উজ্জীবনও বটে। এতে পাহাড়ি জনগণ তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা করে আইনি সুরক্ষা পাবে, এবং তারা সমাজের মূলধারায় আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
অসীম রায় (অশ্বিনী)
বান্দরবান
إرسال تعليق