পাহাড়ে জলকেলিতে মাতোয়ারা তরুণ-তরুণীরা



পছন্দের মানুষ বেছে নিতে জলকেলিতে মাতল মারমা তরুণ-তরুণীরা। 

তিন পার্বত্য জেলায় জলকেলি উৎসবে মেতেছে তরুণ-তরুণীরা। পুরোনো বছরের সব দুঃখ-কষ্ট ও গ্লানি মুছে দিতে একে অপরের ওপর পানি বর্ষণে অংশ নেন তারা।

উৎসবের প্রতিপাদ্য হলো- ‘আঁধারের পাহাড় আলোকিত হয়ে উঠুক শিক্ষার আলোর গুনে, উৎসব হয়ে উঠুক সবার কল্যাণে’।

পুরো শহর ও পাড়া মহল্লার জুড়ে চলে এ উৎসব। শিশু থেকে তরুণ-তরুণী এমনকি বয়স্করাও একে অপরের গায়ে পানি ঢেলে নতুন বছরকে বরণ করে নেন।

 আজ ১৬ ই এপ্রিল বুধবার  বিকেলে দিনব্যাপী ঐতিহাসিক রাজার মাঠে  এ উৎসব চলমান। 

একদিকে তরুণী অপরদিকে তরুণরা মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ায়। ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় পানি ভর্তি করে রাখা হয়। এরপর বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে চলে পরস্পকে পানি ছিটানো। এভাবে এক দলের খেলা শেষে আরেক দল খেলা শুরু হয়। জলকেলি উৎসবের মাধ্যমে মারমা তরুণ-তরুণীদের একে-অন্যের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ হয়। এসময় তারা তাদের প্রিয় মানুষটিকে বেছে নেওয়ার কাজটিও সফলভাবে সেরে নেন। সাংগ্রাই উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পানি খেলা দেখার জন্য হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর উৎসবস্থলে সমবেত হন।

সাংগ্রাই মূলত মারমাদের উৎসব হলেও এর সঙ্গে পার্বত্য জেলার বিভিন্ন  জনগোষ্ঠী এমনকি বাঙালিরাও এতে যোগ দেয়। ফলে এটি আর মারমাদের মধ্যেই  উৎসাহিত বাড়ে। সাংগ্রাই উৎসব পরিণত হয় পাহাড়ি-বাঙালির মিলনমেলায়।

জলকেলি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও হয়। নৌকা বাইচসহ নানা ইভেন্টে অংশ নেন অনেকে।

বান্দরবানে ঘুরতে আসা  মাম্যাচিং মারমা ও ক্রইনু মারমা বলেন, সাংগ্রাইং হচ্ছে মারমাদের বড় সামাজিক উৎসব। এই উৎসবে নৌকা বাইচ, মৈত্রী পানি বর্ষণসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় ছোট-বড় সবাই একত্রে একসঙ্গে বহু বছর পর।

হ্লাচিংয়ই মারমা ও মংচ থুই মারমা বলেন, এই  ঐতিহাসিক রাজার মাঠে  প্রতিবছর সাংগ্রাইং উদযাপন হলেও এবার ছিল ভিন্ন।  প্রতিবছর অপেক্ষায় থাকি কখন সাংগ্রাইং আসবে। কারণ বছরে একবারই সাংগ্রাইং উৎসব হয় যেখানে নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সবাই আনন্দ অপরের ভালো লাগা ।

উৎসবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কেএস মং, আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কাজল কান্তি দাশ, বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য ম্যামানু মারমা, সিলেট বিভাগের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডাক্তার পু চ নু প্রমুখ।

সাংগ্রাইং উদযাপন কমিটির সভাপতি চ  নু মং  মারমা বলেন, এ বছরের মধ্যে এবার ভিন্ন রকমের  সাংগ্রাইং উৎসবে মৈত্রী পানি বর্ষণ (জলকেলি) অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি চ নু মং মারমা, সিনিয়র সহ-সভাপতি নিনি প্রু মারমা, উৎসব উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি থুইসিং প্রু লুবুসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক এবং ক্রীড়াপ্রেমীরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত: বান্দরবানে একদিকে চলছে বাঙ্গালীদের বাংলা নববর্ষের বিভিন্ন আয়োজন আর অন্যদিকে মারমা সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সাংগ্রাই উপলক্ষ্যে সপ্তাহব্যাপী মৈত্রি পানি বর্ষণ,পিঠা উৎসব, লোকজ ক্রীড়া উৎসবসহ নানা আয়োজনে মেতেছে। 


অসীম রায় (অশ্বিনী)

বান্দরবান

Post a Comment

أحدث أقدم
DailyKhobor.Com | ডেইলি খবর
DailyKhobor.Com | ডেইলি খবর