তিনি বলেন -বান্দরবানে মৈত্রী পানি বর্ষণ ও সাংস্কৃতিক সমাপনী অনুষ্ঠানে- প্রধান অতিথিঃ উপদেষ্টা,সুপ্রদীপ চাকমা, তিনি বলেন -প্রেরণা দেয় নতুন উদ্দীপনায় আমাদের ভেতরকার সৃজনশীলতা বিকাশের; উৎসবের আনন্দ জড়িয়ে রেখে জীবনকে উপভোগ করা আর এগিয়ে চলার।
এবার অন্য এক ক্রান্তিকাল! সুযোেগ এসেছে বৈশাখকে তার আদি ঐতিহ্য ফিরিয়ে দেওয়ার। পহেলা বৈশাখকে বাঙালি, চাকমা, মারমা, হাজং, সাঁওতাল বা উর্দুভাষী- সবার কৃষ্টির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে। নতুনকে আলিঙ্গনে তার প্রসারতার বিচারে। পহেলা পেতে চাই।
পার্বত্য চট্টগ্রাম যাতে বঞ্চিত না হয়, সেজন্যই কাজ করছি: সুপ্রদীপ চাকমা।
পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ যেন কখনো বঞ্চিত না হয়, তা নিশ্চিত করতেই সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা।
তিন পার্বত্য জেলায় জলকেলি উৎসবে মেতেছে তরুণ-তরুণীরা। ঐতিহাসিক রাজার মাঠে বান্দরবানে
প্রধান অতিথি আরও বলেন - সুপ্রদীপ চাকমা -সাংগ্রাই মূলত মারমাদের উৎসব হলেও এর সঙ্গে পার্বত্য জেলার বিভিন্ন জনগোষ্ঠী এমনকি বাঙালিরাও এতে যোগ দেয়। ফলে এটি আর মারমাদের মধ্যেই উৎসাহিত বাড়ে। সাংগ্রাই উৎসব পরিণত হয় পাহাড়ি-বাঙালির মিলনমেলায়।
তাই মৈত্রী পানিবর্ষণের সঙ্গে ধর্মের যোগ বেশ স্পষ্ট। তিনি বলেন, পানিকে মারমারা পবিত্র মনে করে। তাই সাংগ্রাইং উৎসবে বন্ধুত্বের বন্ধন এবং পরস্পরের প্রতি মৈত্রী ভাবনা নবায়ন ও সুদৃঢ় করার জন্য একে-অপরের দিকে পানি ছোড়েন।
পুরোনো বছরের সব দুঃখ-কষ্ট ও গ্লানি মুছে দিতে একে অপরের ওপর পানি বর্ষণে অংশ নেন তারা।
উৎসবের প্রতিপাদ্য হলো- ‘আঁধারের পাহাড় আলোকিত হয়ে উঠুক শিক্ষার আলোর গুনে, উৎসব হয়ে উঠুক সবার কল্যাণে’।
পুরো পাহাড়, শহর, গ্রাম, ও পাড়া মহল্লার জুড়ে চলছে এ উৎসব। শিশু থেকে তরুণ-তরুণী এমনকি বয়স্করাও একে অপরের গায়ে পানি ঢেলে নতুন বছরকে বরণ করে নেন।
বান্দরবান সাংগ্রাইং উদযাপন কমিটির সভাপতি চ নু মং মারমা বলেন, সবার সহোযোগিতায় নতুন এর আগামী বার্তায় এ বছরের মধ্যে এবার ভিন্ন রকমের সাংগ্রাইং উৎসবে মৈত্রী পানি বর্ষণ (জলকেলি) অনুষ্ঠিত হয়েছে ।
আজ ১৮ ই এপ্রিল শুক্রবার বান্দরবানে বিকেলে দিনব্যাপী ঐতিহাসিক রাজার মাঠে সমাপনী অনুষ্ঠানে মধ্যে দিয়ে শেষ হলো।
একদিকে তরুণী অপরদিকে তরুণরা মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ায়। ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় পানি ভর্তি করে রাখা হয়। বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে চলে পরস্পকে পানি ছিটানো। এভাবে এক দলের খেলা শেষে আরেক দল খেলা শুরু হয়।
জলকেলি উৎসবের মাধ্যমে মারমা তরুণ-তরুণীদের একে-অন্যের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ হয়। তারা তাদের প্রিয় মানুষটিকে বেছে নেওয়ার কাজটিও সফলভাবে সেরে নেন।
সাংগ্রাই উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পানি খেলা দেখার জন্য হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর উৎসবস্থলে সমবেত হন।
সাংগ্রাই মূলত মারমাদের উৎসব হলেও এর সঙ্গে পার্বত্য জেলার বিভিন্ন ১১টি জনগোষ্ঠী এমনকি বাঙালিরাও এতে যোগ দেয়। ফলে এটি আর মারমাদের মধ্যেই উৎসাহিত বাড়ে। সাংগ্রাই উৎসব পরিণত হয় পাহাড়ি-বাঙালির মিলনমেলায়।
হাজার হাজার পাহাড়ী-বাঙালী মৈত্রী পানি বর্ষণে উপভোগে । সন্ধ্যায় একই স্থানে মারমা আদিবাসীদের বিভিন্ন শিল্পীগোষ্ঠী গান পরিবেশন করে উৎসব অঙ্গনকে মাতিয়ে রাখে। সন্ধ্যার পর থেকে রাতভর চলে আদিবাসীদের মাঠে চল নানান আয়োজন গ্রামীণ মেলা। এতে খাবার, কাপড়-চোপড় ও গৃহস্থলী সামগ্রীর পসরা বসে। সন্ধ্যায় মারমা সম্প্রদায়ের যাত্রাপালার আয়োজন করা হয়।
জলকেলি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও হয়। নানা ইভেন্টে অংশ নেন অনেকে।
বান্দরবানে মৈত্রী পানি বর্ষণ ও সাংস্কৃতিক সমাপনী অনুষ্ঠানে- বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, সচিব, অতিরিক্ত সচিব উপস্থিতি।
উৎসবে উপস্থিত্বে পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক - জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক থানজামা লুসাই, বান্দরবান জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি, বান্দরবান সেনা জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল এএসএম মাহমুদুল হাসান, বান্দরবান জেলার পুলিশ সুপার মোঃ শহিদুল্লাহ কাওছার, পিপিএম(বার), বান্দরবান পৌরসভার প্রশাসক,এস এম, মনজুরুল হক, জেলার বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা, বিভিন্ন শ্রেণীর -পেশাজীবী বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক এবং ছিলেন।
সাংগ্রাইং উপলক্ষে বিভিন্ন এলাকায় - সোমবার, মঙ্গলবার, বুধবার, বৃহস্পতিবার, শুক্রবার থেকে বান্দরবান জেলার ঐতিহাসিক রাজার মাঠে মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসব শুরু হয়েছে আজ সমাপনী অনুষ্ঠান ।
তবে জেলার অন্যান্য জায়গায় গতকাল মঙ্গলবার এই উৎসব শুরু হয়। খাগড়াছড়িতে কোথাও কোথাও সোমবার শুরু হয়েছে মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসব।
মারমা জনগোষ্ঠীর প্রবীণদের একজন শিক্ষাবিদ থোয়াইংচ প্রু। তিনি বলেন, সাংগ্রাইং আখ্যেয়া বা মূল সাংগ্রাই দিনে বুদ্ধমূর্তি স্নানের আগে মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসব হয় না। এটা প্রথাসিদ্ধ রীতি।
সাংগ্রাইং উৎসব উদযাপন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি উ. জলি মং, সহ-সভাপতি নিনি প্রু, সহ-সভাপতি থুইসিং প্রু লুবু, সাধারণ সম্পাদক উক্যসিং (উহ্লামং), সাংস্কৃতিক সম্পাদক একিনু সহ মারমা ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণী এবং নারী পুরুষেরা।
মারমা সম্প্রদায়দের এই জলকেলি উৎসব পাহাড়ী-বাঙ্গালির মিলন মেলায় পরিনত হয়। দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শত শত পর্যটক। রাজার মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ঐতিহ্যবাহী জলকেলি উৎসবের মাধ্যমে শেষ ও সমাপনী সাংগ্রাই অনুষ্ঠান।
বান্দরবান সাংগ্রাইং উদযাপন কমিটির সভাপতি চ নু মং মারমা বলেন, সবার সহোযোগিতায় নতুন এর আগামী বার্তায় এ বছরের মধ্যে এবার ভিন্ন রকমের সাংগ্রাইং উৎসবে মৈত্রী পানি বর্ষণ (জলকেলি) অনুষ্ঠিত হয়েছে ।
প্রসঙ্গত: বান্দরবানে একদিকে চলছে বাঙ্গালীদের বাংলা নববর্ষের বিভিন্ন আয়োজন আর অন্যদিকে মারমা সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সাংগ্রাই উপলক্ষ্যে সপ্তাহব্যাপী মৈত্রি পানি বর্ষণ,পিঠা উৎসব, লোকজ ক্রীড়া উৎসবসহ নানা আয়োজনে মধ্যে শেষ হলো ।
অসীম রায় (অশ্বিনী)
বান্দরবান
إرسال تعليق